Sunday, February 23, 2025
Homeদেশের খবরভঙ্গুর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কমেছে মূল্যস্ফীতি

ভঙ্গুর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কমেছে মূল্যস্ফীতি

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, কর্মসংস্থান এবং মাথাপিছু আয়—সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

শফিকুল আলম বলেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আগামী জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, চলতি বছর ৯ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে, যা মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে।

বিদ্যুৎ খাতেও বড় ধরনের উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া পরিশোধে ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে চলতি বছর প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কূপ খনন করে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে গ্যাস উৎপাদন ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রেসসচিব আরও জানান, বর্তমানে টাকা ছাপানো বন্ধ রয়েছে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো স্থগিত করা হয়েছে। নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় অব্যাহত রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক। দেশের ১ কোটি পরিবার ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছে। বর্তমানে ১৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে, এবং আমদানির পরিমাণ বিবেচনায় নিলে পণ্যের দাম আরও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কোরিয়ান ইপিজেড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা জমি জটিলতার সমাধান হয়েছে। পতিত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে সৃষ্ট এই সমস্যার কারণে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারছিলেন না। তবে গত ৬ ফেব্রুয়ারি কোরিয়ান ইপিজেডকে তাদের ভূমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা এখন বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত। শফিকুল আলম বলেন, এই ইপিজেডে কোরিয়ার বিভিন্ন বড় কোম্পানিগুলো রয়েছে। সমস্যা সমাধানের ফলে সেখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম। তবে আলোচ্য সময়ে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলার, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠকে গত ৬ মাসে দেশের অর্থনৈতিক অর্জন এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন অর্থসচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। শফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরের মধ্যে খুনের ঘটনা সবচেয়ে কম সংঘটিত হয়েছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments