Thursday, November 7, 2024
Homeখোলামতবাফেলোতে বিজয় দিবসের পতাকা উত্তোলন

বাফেলোতে বিজয় দিবসের পতাকা উত্তোলন

মেয়র নির্বাচন শেষ। এখন মেয়র মহোদয় করবেন তার নিজের প্রশাসনিক কাজ, আর দুই পক্ষের সাধারন ভোটাররা করবেন তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত পেশাগত কাজ, ঠিক যেভাবে করতো নির্বাচনের আগে। কিন্তু দুইপক্ষের সমর্থকদের মাঝে এখনো এক ধরনের দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। বায়রন সমর্থকগোষ্ঠি কোন অনুষ্ঠান বা পার্টি করলে, সেটা যেই নামেই হোক পুনর্মিলন কিংবা অন্য কিছু, পরাজিত ইন্ডিয়া ওয়ালটনের সমর্থকদের সেখানে হয়তো ইনভাইট করা হচ্ছে না অথবা ইনভাইট করা হলেও আচরণের সঙ্গত কারনে যাওয়ার পরিবেশ পাচ্ছে না। বিজয়ীরা যদি এভাবে পরাজিতদের সাথে নেতিবাচক কথা ও মনোভাব প্রকাশ করতে থাকে তবে এতে বিভাজন এবং দূরত্ব বাড়তেই থাকবে। নেতিবাচকদের মধ্যে কিছু স্বার্থসিদ্ধি মহল আছে যারা গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেওয়ার মত কর্মকাণ্ড করে বিভেদ আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই উন্নত জাতির মত আমাদেরকেও মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রচলিত আছে আমরা বাংলাদেশিরা ইমোশনাল জাতি যার ফলশ্রুতিতে আমরা জাতি হিসেবে অনেক পিছিয়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত।

রাষ্ট্রীয় বা সাংবিধানিক কিছু রীতিনীতির মধ্যে একটি রীতি হল তাদের প্রতিটি আনুষ্ঠানিক কর্মসুচিতে সমস্ত প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক গনমাধ্যমকে জানানো বা দাওয়াত দেয়া। বাফেলোতেও তাই হওয়ার কথা। কিন্তু এখানে দেখলাম ভিন্নতা। যেহেতু আগে থেকেই গুটিকয়েক বাঙালি প্রতিনিধি সিটি হলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো তাই অন্য কেউ আলাদা ভাবে লবিং করে ভিনদেশীদের কাছে বাঙালি জাতিকে ছোট বা বিভেদ ছড়াতে চায়নি। অপরদিকে সিটি হলের লবিংকৃত ও আয়োজকবৃন্দ বাফেলোর অন্যান্য মিডিয়াকে না জানিয়ে তাদের নিকটতম কিছু সংগঠন ও পছন্দের মানুষকে নিয়ে পতাকা উত্তোলনের ডাক দেয় যা নিয়মবিরুদ্ধ ও অনভিপ্রেত। বাংলদেশী কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি বলেই অনেকে মনে করেন। আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে মাত্র উপস্থিতি দেখা গেছে অল্পসংখ্যক মানুষের, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা জানি বাফেলোতে ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা আছেন এবং বেশ কিছু প্রচারবিমুখ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা যে কোনো দৃষ্টিতে সভা বা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশীদের চেতনার প্রতীক হিসেবে থাকা অত্যন্ত গর্বের এবং সম্মানের। জাতীয় অনুষ্ঠানে তারাই সবার আগে নিমন্ত্রণপ্রাপ্য। সিটি হলের অনুষ্ঠানে তাঁদেরকে উপেক্ষা করে পতাকা উত্তোলন ব্যপারটি যেমন সঠিক ছিলনা, তেমনি ছিল জাতি হিসেবে লজ্জাকর ও দৃষ্টিকটু। তাছাড়া বিবেকবানরা মনে করেন, বিদেশের মাটিতে নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনের প্রকাশ করার জন্য কেউ জয় বাংলা, কেউ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, এবং নারায়ে তাকবীর বলা দেশের জন্য কতটুকু অসম্মানের তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা। মেয়র মহোদয়সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে এই ধরনের প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড নিজ দেশকে অসম্মান করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মানে অনেকের মতো মেয়র মহোদয়ও হয়তো এখন বাঙালীদের কাদা ছোড়াছুড়ির চরিত্রটা আঁচ করতে পেরেছেন। নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা সভার শেষ পর্যায়ে ছিল বলে তেমন কারো চোখে পড়েনি, তা নাহলে এটা হতো টক অব দ্যা টাউন এবং নিউইয়র্কের অনেক প্রভাবশালী গনমাধ্যমে হয়তো এটা হতো ব্রেকিংনিউজ। আমেরিকা পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ। আর সেই জন্যই পক্ষ-বিপক্ষ প্রার্থী নির্বাচনের পরপরই ফলাফল মেনে নিয়ে একে অপরকে মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ করে অভিনন্দন জানিয়ে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ধারণ করে এবং সেইসঙ্গে পুরো বিশ্বের গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নির্বাচন শেষে বাফেলোতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অবস্থানরত সমস্ত জাতি মিলে গেলো শুধু বাংলাদেশীরাই মিলতে পারলোনা। এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নত দেশে দীর্ঘ সময় বসবাস করে আমরা কি শিখলাম? বাফেলোতে বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিনের প্রবাসী ৯৯% বাঙালি দেশ থেকে সরাসরি বাফেলোতে আসেননি, প্রথমে নিউইয়র্ক সিটি সহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতে দীর্ঘদিন থাকার পর বাফেলোতে এসেছে। সেই হিসেবে বাফেলোর বাংলাদেশিরা অধিকতর অভিজ্ঞ বলে আমি মনে করি। আমাদের সন্তানদের সত্যিকারের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য, এসব অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, তাই উন্নত জাতির মত আমাদেরকেও ভাবনায়, মানসিকতায় এবং প্রকাশ-আচারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। ইতিবাচক পারিবারিক শিক্ষাই শুধু ইতিবাচক সমাজ গঠন করতে সাহায্য করবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments