Monday, December 23, 2024
HomeUncategorizedইসলাম কেন ইতিহাস?

ইসলাম কেন ইতিহাস?

 

ইসলাম নামটা সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া শুধু ভার নয়, বরং অসম্ভব কথাটা ভালো শোনায়। ভালো হিসেবে হোক বা মন্দ হিসেবে হোক, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, অনুসারী হিসেবে হোক বা বিরুদ্ধাচারী হিসেবে হোক (সবথেকে ভালো অবশ্য ইনারাই জানেন), মোটকথা যেভাবেই হোক না কেন, ইসলামের নাম মানুষ শুনবেই। কিছুক্ষেত্রে আবার এর সাথে কিছু বিশেষণ যোগ করে মানুষ জানে যেমন উগ্রবাদ, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি। খুব আশ্চর্য এবং অদ্ভুত হলেও এটাই সত্য যে, বর্তমান সময়ে এমন নেতিবাচক শব্দগুলো যতটা না অন্য ধর্মালম্বীরা করছেন, তার থেকে মুসলিম নামধারী ব্যাক্তিরাই বেশি করছেন। ব্যাপারটা কেমন না? মানে বিষয়টা এমন দাঁড়ালো যে আপনার বাবাকে আপনি নিজেই গালি দিচ্ছেন, বাইরের মানুষের থেকে বেশি। বুঝতে অসুবিধা হলো তো? চিন্তা করবেন না, বুঝিয়ে দিচ্ছি। একটু বড় আকারে আমি বুঝাই ব্যাপারটা। ধরুন আপনি একজন জার্মান নাগরিক। আপনার সামনে একজন ব্রিটিশ নাগরিক দাঁড়িয়ে জার্মানী কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে আর আপনি তা বসে বসে হজম করছে। এক পর্যায়ে আপনি নিজেই উনাকে থামিয়ে দিয়ে জার্মানীকে নাৎসি বলে গালি দিলেন। শুধু তাই নয়, আপনি আপনার নিজের জাতিসত্ত্বা, অর্থাৎ আপনার অতীত পূর্বপুরুষদের কীর্তির প্রতিটা অংশকেই আপনি গালিগালাজ করছেন, এমনকি পারেন তো নিজের জার্মান পরিচয়টাও মুছে ফেলতে চাইছেন,

কেমন হবে ব্যাপারটা? খুব কি অবাক লাগছে? এবার একটু চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখুন তো, আপনার আশেপাশেই কি এমন হাজার হাজার মানুষ বাস করছে না, এমনকি কিছু অংশে আপনিও আপনার মুসলিম সত্বা নিয়ে এমন নন? নিজেকে কি প্রশ্ন করেছেন কখনো?

সম্ভবত শুরতেই এভাবে চার্জিং সূচক কথা দিয়ে কিছুটা ভড়কে দিয়েছি যা আদৌ আমার উদ্দ্যেশ্য নয়। আমি শুধু আমাদের বর্তমান মুসলিম সমাজের নিজের সম্পর্কে ধারণার একটা নগ্ন চিত্রকেই মোটা দাগে অভিহিত করেছি। জানি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে এই মূহুর্তেই আপনার রক্ত টগবগিয়ে উঠছে। হয়তো মনে মনে আমাকে অর্বাচীন ভেবে বকাবকিও করে ফেলেছেন। কিন্তু উত্তেজনা প্রশমিত হলে নিজে একটু চিন্তা করে দেখবেন যে আসলেই কি আমি অর্বাচীন নাকি আমার কথায় কিছুটা হলেও সত্যতা আছে?

মূলকথায় ফিরে আসি। বলছিলাম সেই জার্মান ভদ্রলোকের কথা। এখন বলুন তো যে সেই ভদ্রলোক যে এভাবে তার নিজের জাতিকে গালিগালাজ করলেন তার প্রধান কারণ কি হতে পারে? না, আপনি যা ভাবছেন তা নয়। বিবেকের তথাকথিত দংশনে কোনো মানুষই তার পূর্বপুরুষকে গালি দিবে না। সর্বোচ্চ তাদের কিছু অংশকে দোষারোপ করতে পারে, সেটাও তেমন ভাষায় যা তার বংশ বা জাতিকে কলংকিত করবে না। কিন্তু সে এই কাজ তখনই করতে পারে যখন সে তার গোড়া বা রুটকে ভুলে যায়। সেই গোড়া বা শিকড়টা কি? সেটা হলো সেই জাতির ইতিহাস। একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে বা তার শক্তিকে চিনতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ইতিহাস না জানবে। ইতিহাস হলো মানুষের শক্তি, ইতিহাস মানুষের পরিচয়। আর পরিচয়বিহীন মানুষ আর মাঝি ছাড়া নৌকার মাঝে জীব এবং জড়বস্তুর পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য আছে বলে আমার অন্তত জানা নেই? আপনার কি আছে? হ্যাঁ আপনাকেই জিজ্ঞেস করছি।

এবারে আসা যাক, কেন ইসলাম বা মুসলিম ইতিহাসের একটা অংশ। লক্ষ্য করলে দেখবেন যে ইতিহাসে একমাত্র মুসলিম সভ্যতাই একমাত্র সভ্যতা যা একটি ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে। আপনি রোমান সভ্যতার কথা শুনবেন, গ্রীক সভ্যতা, মিশরীয়, ইনকা ইত্যাদি অনেক সভ্যতার কথাই শুনবেন। তাদের নিজস্ব ধর্মও ছিল। কিন্তু কোনোটাই ধর্মকে ভিত্তি করে নয়। একমাত্র ইসলামই তেমন সভ্যতা যা ধর্মকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আমার সেক্যুলার ভাইটি যিনি লেখাটি পড়ছেন তিনি মুখস্ত “ধর্মব্যাবসায়ী” কথাটা বলার আগে বলে দিতে চাই, এটা মানুষের ধর্মাবেগকে পুঁজি করে বা অস্ত্রের মুখে জোর করে ধর্মগত নিধন করে করা হয়নি। সেটা করা হলে ভারতবর্ষে বা হাঙ্গেরী বা বুলগেরিয়াতে আপনারা হিন্দু বা খ্রিস্টান বলে কাউকে দেখতেন না, যেমনটা আর্জেন্টিনাতে কালো মানুষ আপনারা দেখেন না। মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ইসলাম একটি ধর্ম হওয়া সত্যেও শুধুমাত্র ধর্মের গণ্ডিতে আটকে থাকেনি। তা ব্যাক্তি এবং সমাজের সীমা ছাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পৌঁছে গিয়েছিল এবং তা প্রায় সহস্রাধিক বছর পর্যন্ত পৃথিবী শাসন করেছে। কিন্তু কেন? ইতিহাসে ইসলাম এতটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে কেন অবস্থান করছে। এর ব্যাখ্যা অনেকভাবেই দেয়া যায়। যদি ইসলামের তরফ থেকে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে প্রতিটা গ্রন্থ এবং ধর্ম একটি নির্দিষ্ট জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছে। কিন্তু কোরআন সমস্ত মানবজাতির জন্য আবির্ভূত হয়েছে। হেন কোনো বিষয় নেই যা কোরআনে বর্ণিত নেই। বিজ্ঞানপ্রেমী যেসব ভাইয়েরা ইসলাম বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা রাখেন তা যে তারা তাদের নিতান্ত জ্ঞানের অভাব অথবা জ্ঞানপাপী হবার কারণে বলেন সে কথা অনস্বীকার্য।

রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি উপাদান ইসলামী শরিয়তের মাঝে রয়েছে যা দ্বারা একটি সমাজ বা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করা যায় যা মদিনা সনদ থেকে আমরা দেখতে পাই যা ম্যাগনাকার্টারও প্রায় ৬০০ বছর আগের।

ইসলাম পৃথিবীকে সমস্ত কিছুই দিয়েছে। বিজ্ঞান, কলা, সুশাসন, সফল যুদ্ধরীতি, সফল অর্থনীতি সহ সবকিছু। এমনকি ইসলামের পতনও অন্যান্য সাম্রাজ্যের মত হঠাৎ এক ঝড়ে হয়নি। নিজেদের গাফিলতি এবং কয়েক শতাব্দীর পরিকল্পনার মাধ্যমেই এর পতন হয়েছে। ইসলামের প্রতি পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষার ছোঁয়া। যেই মুসলিম ভাইটি আজ জঙ্গি বলে মুসলিমদের গালি দিচ্ছেন, তিনি নিজেও জানেন না যে তারই পূর্বপুরুষ, এই তথাকথিত জঙ্গিদের একজন হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) এর পরিচালিত ইয়ারমুকের যুদ্ধ বর্তমান যুগের সামরিক বাহিনীর একটি পাঠ্য। মুসলমানদের পশ্চাৎপদ বলা ভাইটি পরমূহুর্তেই জাবির ইবনে হাইয়ানের আবিষ্কৃত সালফিউরিক এসিড নিয়ে পড়ছেন, হাসান ইবনে হাইসামের আবিষ্কৃত মাধ্যাকর্ষণের সূত্র (যা সেই ভাইটি জানেনও না যে এটা তার আবিষ্কৃত), আলোর প্রকৃতি নিয়ে পড়ছেন। এত দূরে যদি নাও যাই, কাছাকাছি অতীতে যদি যাই, প্রথম প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসী হামলা, যাকে আজ জঙ্গি হামলা বলা হয় সেটা কারা করেছে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার সাধারণ জ্ঞানে দিজ্ঞজ মুসলিম ভাইটিও বলতে পারবেন না যে এই হামলাটি হয় ১৯৪৬ সালে হাগানাহ নামক এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠির মাধ্যমে কিং ডেভিড হোটেলে যারা ছিলেন বর্তমান সময়ের মানবতার ধ্বজাধারী তথাকথিত “নির্যাতিত” ইহুদীরা। ইসলামে নারীদের অধিকার নেই বলে চিৎকার করে গলা ফাটানো আপুমনিটি জানেন না যে ইসলাম নারীদেরকে জ্যান্ত কবর দেয়া থেকে উঠিয়ে এনে পিতার জান্নাতের পথ আর সন্তানের সরাসরি জান্নাত বানিয়েছে। আরো কত কথা রয়েছে যেগুলো বলার সময়, সুযোগ বা জায়গা কোনোটিই এখানে নেই।

আমার যেই ভাইটি খানিকক্ষণ আগে ইসলামকে সেকেল ধর্ম এবং মুসলিমদেরকে পশ্চাৎপদ জাতি বলছিলেন, আপনি কি একটু সময়ের জন্য হলেও চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন? যদি পড়ে যান ভালো। জ্ঞানকে ঝালিয়ে নিন। শিক্ষার তো শেষ নেই। আর যদি না পড়ে থাকেন, তাতেও সমস্যা নেই। আমি সাধারণ একজন ইসলামের ছাত্র এবং আল্লাহর বান্দা মাত্র। আমিও আরো পড়াশোনা করবো, জ্ঞানের আদান প্রদান চলবে আমাদের মাঝে। আর এই যে যুবক ভাইটি যে একটু আগে মোবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিলে কিংবা এড শ্যারনের গান শুনছিলে, যে নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করো, নিজের ইসলামের জ্ঞানের দারিদ্র্য কি তোমাকে একটুও পোড়াচ্ছে না? একটুও কি মনের মাঝে জ্বলন হচ্ছে না এই ভেবে যে এতটা জীবন কি করলাম? জানতে মন চাইছে না যে আমি কিভাবে এলাম, আমাকে যা বলে গালি দেয়া হয়, আমার নবীকে যেসব অপবাদ দেয়া হয়, আমার জীবন ব্যবস্থাকে যেসব কথা বলে দমিয়ে রাখা হয় তা আসলেও সত্য কিনা? যদি তা হয়ে থাকে, তবে পড়ো, ইসলামকে পড়ো, ইসলামের ইতিহাসকে জানো। জানো খালিদ (রা) কে, জানো ফতেহ মুহাম্মদ কে, জানো সেলজুক সাম্রাজ্য কি, জানো কেন ইসলামের বিশ্বজয় আর ব্রিটিশ, ডাচদের বিশ্বজয়কে এক কাতারে ফেলা যাবে না। ইতিহাস জানো। ইসলাম একটা জলন্ত ইতিহাস, যাকে চাইলেও পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলা যাবে না। ইতিহাস তৈরি করেছেন তোমার পূর্বপুরুষ, আর তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তুমি। তাই তোমাকে জানতে হবে তোমার শিকড়কে। যুগে যুগে ইসলাম অন্যায়কে দূরীভূত করে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সমাজে স্থিতিশীলতা রেখেছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই স্থিতিশীলতাই ইসলামিক সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে কথা অন্য একদিন হবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ইসলাম পরতে পরতে বিশ্ববাসীর জন্য দৃষ্টান্ত এবং উদাহরণ রেখে গেছে। এ কারণেই ইসলাম নিজে এক ইতিহাস, যা ছিল, রয়েছে এবং থাকবে বিশ্ববাসীর আলোকবর্তিকা হয়ে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments