ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে তিন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি)’ মডেলে রূপান্তরের এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বরিশালে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। বরিশালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফরিদপুরে বিআইটি গঠনের দাবিতে সড়ক অবরোধ
ফরিদপুর সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বাতিল করে বিআইটি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) মডেলে রূপান্তরের এক দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সকাল ১০টায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পদযাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। চানমারী, কমলাপুর, রাজেন্দ্র কলেজের সামন দিয়ে মুজিব সড়ক হয়ে পদযাত্রাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সড়কের একাংশ অবরোধ করে তারা সমাবেশে অংশ নেয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক সমন্বয়হীনতা চলছে, যার ফলে শিক্ষার্থীদের পেশাগত ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
ময়মনসিংহে তীব্র যানজট, বৃষ্টিতেও আন্দোলন স্থির
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রহমতপুর বাইপাস মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ-জামালপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আন্দোলন অব্যাহত থাকে। বৃষ্টির মধ্যেও সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা দুই মাস ধরে যুক্তিসংগত এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। ওপর মহল কোনো কর্ণপাত করছে না বলেই আজ আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি।”
বরিশালে সংঘর্ষ, আহত অন্তত ৩০
বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে বরিশাল-ভোলা মহাসড়কে দুর্গাপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুপুর ২টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে গেলে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে লাঠিচার্জ করে অবরোধ তুলে দেয়। এতে নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন: শুভ চন্দ্র সরকার, শাহবাজ আশরাফি, আয়নান চৌধুরী, বিথী ও ইয়াদসহ অনেকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রীদের ওপর পুরুষ পুলিশ সদস্যরা হামলা চালিয়েছেন, যদিও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘটনার পর কিছু সময় উত্তেজনা থাকলেও পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
গত ১৮ মে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকার আত্মহত্যা করেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, চলমান শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা তাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে। এরপর ২০ মে থেকে তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ‘কমপ্লিট একাডেমিক শাটডাউন’ চালিয়ে আসছেন। ঈদের পর ১৪ জুন কলেজ খোলার পরও কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ২৪ জুন থেকে প্রশাসনিক ভবন তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি—কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিআইটি মডেলে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হোক। আমাদের কলেজগুলো ধ্বংসের পথে। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”