এলাকার দিক থেকে অ্যারিজোনা যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ বৃহত্তম রাষ্ট্র। অ্যারিজোনা সংযুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সর্বশেষ ইউনিয়নে অন্তভূক্ত হওয়া ৪৮তম রাষ্ট্র এবং ১৯১২ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করে। গরম নিম্ন-উচ্চতার মরুভূমির জন্য ব্যাপকভাবে খ্যাতিমান হলেও অর্ধেকের বেশি অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে ৪,০০০ ফুট (১,২০০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত এবং এখানে রয়েছে বিশ্বের মধ্যে চিরসবুজ পোন্ডারোসা পাইন গাছের বৃহত্তম উপস্থিতি।
অ্যারিজোনা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিনপশ্চিম দিকে অবস্থিত এবং পশ্চিমে ক্যালিফোর্নিয়া, উত্তর-পশ্চিমে নেভাদা, উত্তরে ইউটাহ, পূর্বে নিউ মেক্সিকো এবং দক্ষিণে সোনোরার মেক্সিকো রাজ্য। ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদার সাথে সীমানা হিসাবে রয়েছে কলোরাডো নদী। রাজধানী ফিনিক্স রাজ্যের দক্ষিণ-মধ্য অংশে অবস্থিত এবং অ্যারিজোনার বৃহত্তম শহর।
প্রাচীন যুগে হাজার হাজার বছর ধরে অ্যারিজোনা অনেক আদিবাসী আমেরিকান উপজাতির বাসস্থান ছিল। ১৫৩৯ সালে ফ্রান্সিসকান যাজক মার্কোস দে নিজা প্রাচুর্যের সন্ধানে অ্যারিজোনায় আগমন করেন এবং আশা করেন যে একই সাথে তিনি স্থানীয় আমেরিকানদের খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার সুযোগ পাবেন। পরের বছর ফ্রান্সিসকো Vázquez ডি করোনাডো স্পেনের পক্ষে বর্তমানে আমেরিকান সাউথওয়েস্ট নামে পরিচিত অঞ্চল দখল করার প্রচেষ্টায় অ্যারিজোনায় একটি বড় সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করেন। ১৭০০ সালের শুরুতে রোমান ক্যাথলিক মিশনারিজরা দক্ষিণ অ্যারিজোনার সান্তা ক্রুজ উপত্যকায় গির্জা স্থাপনের কাজ করেন।
১৮২১ সালে মেক্সিকো যখন স্পেন রাজ্য এবং তার স্প্যানিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে তখন বর্তমানের অ্যারিজোনা নিউভা ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের “নিউ ক্যালিফোর্নিয়া” অংশ হয়ে ওঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরবর্তী ইউরোপীয়-আমেরিকান অভিবাসীদের আগমনের সময় এই অঞ্চলে ঔপনিবেশিক বছর থেকে জাতিগত স্প্যানিশ এবং মেস্টিজো বসতিস্থাপনকারীদের বংশধরদের বসবাস ছিল।
মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধের সময় (১৮৪৭-১৮৪৮) মার্কিন সেনাবাহিনী মেক্সিকো সিটির জাতীয় রাজধানী দখল করে নেয় এবং উত্তর মেক্সিকোর বেশিরভাগ অংশ যা পরবর্তীতে ১৮৬৩ সালে অ্যারিজোনা অঞ্চল এবং আরো পরে ১৯১২ সালে অ্যারিজোনা রাজ্য হয়ে ওঠে তার দখলত্ব দাবি করে। ১৮৫৩ সালে আন্তঃমহাদেশীয় রেলপথের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘গ্যাডসডেন ক্রয়’ এর অধীনে মেক্সিকো থেকে গিলা নদীর দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা বরাবর অঞ্চল অধিগ্রহণ করে।
১৮৫১ সালে মার্কিন সেনা বাহিনীর ইন্জিনিয়ার কোর ক্যালিফোর্নিয়ায় যাতায়াতের একটি ওয়াগন রোড তৈরি করার উপযুক্ত পথ খুঁজতে অ্যারিজোনায় বেশ কয়েকটি অভিযান প্রেরন করে। স্থানীয় আমেরিকানদের কাছ থেকে ভ্রমণকারী, খনিবিদ এবং অন্যান্য বসতি স্থাপনকারীদের সুরক্ষার জন্য, মার্কিন সরকার গুরুত্বপূর্ন জায়গাগুলিতে সেনা পোস্ট স্থাপন করতে শুরু করে। ১৮৮৩ সালে শ্রমিকরা উত্তর অ্যারিজোনা জুড়ে অ্যাচিসন, টোপেকা এবং সান্তা ফে রেলপথের কাজ সম্পন্ন করে এবং এর ফলে সেন্ট লুই ও মিসৌরির সাথে ক্যালিফোর্নিয়া যুক্ত হয়। একই বছর দক্ষিণ প্রশান্ত রেলপথ টুকসন এবং ইউমা হয়ে নিউ অরলিন্স থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত একটি লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করে।
কেন্দ্রীয় সরকার ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৮৬৩ নিউ মেক্সিকোর পশ্চিম অর্ধাংশ নিয়ে একটি নতুন মার্কিন অ্যারিজোনা অঞ্চল এবং সীমানা ঘোষণা করে। এই নতুন সীমানা পরবর্তীকালে অ্যারিজোনা রাষ্ট্রের ভিত্তি গঠন করে। প্রথম আঞ্চলিক রাজধানী প্রেসকোটে পরে টুকসনে, আবার প্রেসকোটে এবং পরে ফিনিক্সে চূড়ান্তভাবে স্থানান্তরিত হয়।
“গ্যাডসোনিয়া”, “পাইমেরিয়া”, “মন্টেজুমা” এবং “আরিজুমা” নামগুলি এই অঞ্চলের জন্য বিবেচনা করা হলেও ১৬ তম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন অ্যারিজোনা নামেই চূড়ান্ত বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন এবং শেষপর্যন্ত সেই নামটি গৃহীত হয়।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত জেসাস ক্রাইস্ট চার্চের নেতা ব্রিগেহম ইয়ং অ্যারিজোনায় মরমোনদের প্রেরণ করেছিলেন। তারা মেসা, স্নোফ্লেক, হেবার, সাফর্ড এবং অন্যান্য শহর স্থাপন করে। তারা ফিনিক্স উপত্যকা বা “সূর্যের উপত্যকা”, টেম্প, প্রেসকোট এবং অন্যান্য অঞ্চলেও বসতি স্থাপন করে। মরমোনদের স্থাপিত বসতি পরবর্তিতে উত্তর অ্যারিজোনা এবং উত্তর নিউ মেক্সিকোতে পরিণত হয়েছিল।
উনিশ শতকে এই অঞ্চলটিতে একাধিক স্বর্ণ ও রূপা খুঁজার ঘটনা ঘটে। ১৯১২ সালে অ্যারিজোনা রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জনের পর পরই এটি “পাঁচ সি” (Five C) এর স্থান হিসাবে সুপরিচিত হয়ে উঠে। এই ‘সি’গুলো হচ্ছে: তামা (Copper), গবাদি পশু (Cattle), তুলা (Cotton), সাইট্রাস (Citrus) এবং জলবায়ু (Climate)। দেশের অন্যান্য অংশের স্বাস্থ্যনিবাস সন্ধানকারীরা আবিষ্কার করে যে অ্যারিজোনার বিশুদ্ধ, পরিষ্কার, শুকনো বাতাস শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন অসুস্থতা থেকে স্বস্তি এনে দিতে পারে। এইভাবে অভিবাসী এবং দর্শনার্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রবাহের ভিত্তি তৈরি হয় এবং তারা এই রাজ্যে অর্থের সঞ্চালন অব্যাহত রাখে। ১৯২০ এর দশকের সময় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক পর্যটক, শীতকালীন বাসিন্দা এবং অবসর গ্রহণকারীদের আবাসন সংকুলান করতে অনেক “মোটর কোর্ট” (মোটেলস), ডুড রেঞ্চ, এবং রিসোর্ট গড়ে উঠে। এখানকার অনুকূল জলবায়ু এবং দেশের উপকূল থেকে এর দূরত্বের কারনে অ্যারিজোনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কয়েকটি ফ্লাইট স্কুল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সামরিক ঘাঁটির স্থান হয়ে উঠে। যুদ্ধের পর অন্যান্য রাজ্যগুলি থেকে বিশেষত মধ্য-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আগত অভিবাসনের ফলে ফিনিক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত বর্ধমান শহুরে অঞ্চলে পরিণত হয়। এছাড়াও ফ্রিজ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের বিকাশ এবং ব্যাপক ব্যবহার অ্যারিজোনাকে আকর্ষণীয় এবং বাসযোগ্য করে তুলেছিল।
১৮৮০ দশকের শেষদিকে বিসবি, অ্যারিজোনা এবং জেরোম মতো তামা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে তামা উৎপাদন অন্যান্য মূল্যবান ধাতুকে পিছে ফেলে আসে। ১৯০৭ সালের মধ্যে অন্য রাজ্যের তুলনায় তামা খনির অঞ্চলটি আরও বেশি তামা উৎপাদন করে সমৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একারনে রাষ্ট্রেীয় মর্যাদা অর্জনের সময় আ্যরিজোনা “তামা রাষ্ট্র” ডাকনাম অর্জন করে। অ্যারিজোনা এখনো দেশটির নতুন খনিজ তামার অর্ধেক উৎপাদন করে চলেছে।
অ্যারিজোনা হেলথ সার্ভিসেস বিভাগ, নিয়োগ বোর্ড, কমিশন এবং কাউন্সিল সমন্বিতভাবে বেশ কয়েকটি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য সহায়তা এবং স্বাস্থ্য পরিদর্শন পরিষেবা প্রদান করে। মহানগর অঞ্চলে বেসরকারী চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত উন্নত মানের তবে গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা এখনো নিম্নমানের রয়ে গেছে।
নগরায়ন ও শিল্প সম্প্রসারণ অ্যারিজোনার প্রধান অঞ্চলগুলিকে এতটাই দূষিত করেছে যে বিশুদ্ধ বাতাসের সন্ধানে অসুস্থ মানুষের জন্য এটি আর আগের মত আশ্রয় হিসাবে কাজ করে না। তবে এখানকার জলবায়ু, নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী এবং নৈমিত্তিক জীবনযাত্রা এখনও প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক আকর্ষণ করে এবং এ কারনে অ্যারিজোনা, বিশেষ করে এর নিম্ন মরু অঞ্চল জনপ্রিয় অবসর কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ফিনিক্সের নিকটবর্তী সান সিটি এবং টাকসনের নিকটে গ্রীন ভ্যালির মত বড় অবসরপ্রাপ্তের সম্প্রদায়গুলির বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
এক নজরে অ্যারিজোনা
২০০৯ পর্যন্ত অ্যারিজোনার পাঁচটি বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী
মেক্সিকান : ২৭.৪%
জার্মান : ১৬.০%
আইরিশ : ১০.৮%
ইংরেজ : ১০.১%
ইতালিয়ান : ৮.৬%
দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ইউনিয়নে ভর্তি : ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯১২ (৪৮ তম)
রাজধানী : ফিনিক্স
সরকার
গভর্নর : ডাওগ ডুসি (রিঃ)
সেক্রেটারি অফ স্টেট : কেটি হবস (ডেমোঃ)
আইনসভা : অ্যারিজোনা আইনসভা
উচ্চকক্ষ : সিনেট
নিম্নকক্ষ : হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস
বিচার বিভাগ : অ্যারিজোনা সুপ্রিম কোর্ট
মার্কিন সেনেটর : ক্রিস্টেন সিনেমা (ডেমোঃ), মার্ক কেলি (ডেমোঃ)
মার্কিন হাউসের প্রতিনিধি : ৫ ডেমোক্র্যাট, ৪ রিপাবলিকান
আয়তন
মোট : ১১৩,৯৯০ বর্গমাইল (২৯৫,২৩৪ বর্গ কিমিঃ)
ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা : ৪,১০০ ফুট (১,২৫০ মিটার)
সর্বোচ্চ উচ্চতা (হামফ্রেস চুড়া : ১২,৬৩৭ ফুট (৩,৮৫২ মিটার)
জনসংখ্যা (২০১৯)
মোট : ৭,২৭৮,৭১৭
ঘনত্ব : ৫৭/বর্গ মাইল (২২/বর্গ কিমিঃ)
মধ্যম পরিবারের আয় : ৫৬,৫৮১ ডলার
ভাষা
সরকারী ভাষা : ইংরেজি
কথ্য ভাষা : ইংরেজি ৭৪.১%, স্প্যানিশ ১৯.৫%, নাভাজো ১.৯%, অন্যান্য ৪.৫%
সময় অঞ্চল
রাজ্যের অধিকাংশ : ইউটিসি-০৭:০০
গ্রীষ্মকাল : ইউটিসি-০৬:০০
ইউএসপিএস সংক্ষিপ্তরূপ : AZ