যতই দিন যাচ্ছে, নৃশংসভাবে আপনার যাবতীয় ডিজিটাল সিস্টেম ছিনতাই করার নতুন নতুন আর অভাবনীয় কৌশল তৈরি হচ্ছে। কয়টা জানেন আপনি?
বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ লক্ষ্য করে সাইবার হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা। এ জন্য তারা ভূয়া ফেসবুক অ্যাকাউণ্ট থেকে গ্রাহক সেজে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজের মেসেঞ্জারে ফিশিং মেসেজ পাঠিয়ে থাকে। এসব ফিশিং মেসেজে পাসওয়ার্ড চুরির ক্ষতিকর প্রোগ্রাম (ম্যালওয়্যার) থাকে।
মেসেজের লিংকে ক্লিক করলেই হ্যাকাররা পেজে অনুপ্রবেশ করে তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে এবং ফেসবুক পেজের দখল নিতে পারে।
কিছুদিন আগে ফেসবুক পেজ ভ্যারিফাই করে দেওয়ার লোভনীয় কিছু বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়ে। পেজ ভ্যারিফাই করার জন্য আপনাকে একটি সফটওয়্যার ইনস্টল দিতে বলে তারা। সজ্ঞানে আপনি-আমি কখনই ওই বিজ্ঞাপন বিশ্বাস করব না। কিন্তু আপনিই যখন কমেন্ট সেকশনে দেখবেন অসংখ্য পেজ তাদের সার্ভিস অনুসরণ করে ভ্যারিফাই হয়ে ব্লু টিক নিয়ে কমেন্টে কৃতজ্ঞতার জয়জয়কার শুরু করেছে, তখন আপনি একটু হলেও ভাববেন, “আসলেই কি ভুয়া?”
এবার আপনি কমেন্টে খুঁজবেন, আপনার মত কোনো সাধারণ ইউজার এই পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করেছে কি-না। আপনি তাদের টাইমলাইনে চোখ রাখবেন, “দেখি কী হয়”। অপ্রত্যাশিতভাবে ৬-৭ ঘন্টার মাথায় তাদের পেজটিও ভ্যারিফাই হয়ে যাবে! আনন্দে আত্নহারা হবেন আপনি। ভেবে বসবেন, “ধুর, সবই কি স্ক্যাম হয় নাকি?”
—পর্দার আড়ালে কী হলো?
এরা যে সফটওয়্যারটি ইনস্টল দিতে বলে, তা মূলত ট্রোজান হর্স বা ট্রোজান ম্যালওয়্যার। ইনস্টল দিলে, এটি কম্পিউটার সিস্টেমে বৈধ সফটওয়্যারের ছদ্মবেশে প্রবেশ করবে। এরপর আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাক্সেস নিয়ে তা থার্ড-পার্টি পদ্ধতিতে ভ্যারিফাই করে আপনার পেজ দিয়েই পুনরায় একই বিজ্ঞাপনের প্রচারণা শুরু করে। (যারা বলেন, থার্ড-পার্টি পদ্ধতিতে ফেসবুক পেজ ভ্যারিফাই করা যায় না, তাদের জন্য সমবেদনা)।
আপনার সিস্টেমে কোন সফটওয়্যারে এই ভাইরাস প্রোগ্রামটি আছে, তা আপনি জানবেনও না। এটি আপনার ডাটা এনক্রিপশন, ডাটা চুরি তো বটেই, এমনকি ডাটা ইচ্ছেমত পরিবর্তন পর্যন্ত করতে পারে। আপনার ব্যাংক ডিটেইল থেকে শুরু করে মোবাইল ফিনানশিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ তথ্য)—সহ সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া ও জিমেইল অ্যাকাউন্টের তথ্য তারা স্ক্রিনে দেখতে পাবে।
এক কথায়, যেই মুহূর্তে আপনি এই সফটওয়্যার ইনস্টল দেবেন, তখন থেকে আপনার নিজের আর কোনো ডিজিটাল অস্তিত্ব থাকবে না, আপনি সবকিছু থেকে ‘কিক-আউট’ হবেন।
ফেসবুক বিজ্ঞাপন ছাড়াও, কিছু বৈধ সফটওয়্যার যেমন অ্যাডোবির দরকারি প্রোগ্রামগুলোর ফ্রি ভার্সনগুলোতে গণহারে ট্রোজান হর্স ধরা পড়ছে ইদানিং। যাদের ডেস্কটপে ভালো কোনো সাইবার সিকিউরিটি, পেইড অ্যান্টি-ভাইরাস প্রোগ্রাম রয়েছে, তাদের সিস্টমে এসব ইনস্টলের ক্ষেত্রে ট্রোজানের উপস্থিতি সনাক্ত করে অ্যালার্ট দেয়। কিন্তু ‘বিশেষ প্রয়োজনের’ কাছে এসব অ্যালার্ট ফিকে হয়ে যায়।