রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে মোতায়েন করা যে কোনো পশ্চিমা সেনা বাহিনী রাশিয়ার জন্য ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কোনো বিদেশি বাহিনী সেখানে উপস্থিত থাকলে, তা মস্কোকে হুমকির মুখে ফেলবে।
পুতিনের এই মন্তব্যের একদিন আগে কিয়েভের মিত্র দেশগুলো ঘোষণা দেয়, তারা ইউক্রেনে একটি ‘আশ্বাস বাহিনী’ পাঠাবে। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতৃত্বে মোট ২৬টি দেশ স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বাহিনীর মূল কাজ হবে ইউক্রেনে শান্তি চুক্তির কার্যকর পর্যবেক্ষণ করা এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধে কোনো নতুন আগ্রাসন প্রতিরোধ করা।
তিন বছর ছয় মাস ধরে চলা এই সংঘাতে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বহু এলাকা ধ্বংস হয়েছে। এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনাদের সমর্থন অপরিহার্য।
দূরপ্রাচ্যের ভ্লাদিভস্তক শহরে এক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন বলেন, “যদি সেখানে কিছু সেনা হাজির হয়, বিশেষ করে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, আমরা ধরে নেব তারা বৈধ লক্ষ্যবস্তু। এই ধরনের বাহিনী মোতায়েন দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য কোনোভাবেই সহায়ক নয়।” তিনি ইউক্রেনের পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ককেই সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
পুতিন আরও বলেন, যদি কোনো চুক্তি সম্ভব হয়, তবে সৈন্য মোতায়েনের প্রয়োজন হবে না। তিনি যুক্তি দেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ক্ষেত্রে বিদেশি বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজনীয় নয় এবং রাশিয়া যে কোনো চুক্তি পূর্ণভাবে মেনে চলবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখোর সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, “আজ ২৬টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে—যে তারা ইউক্রেনে ‘আশ্বাস বাহিনী’ হিসেবে সেনা পাঠাবে বা উপস্থিত থাকবে।” জেলেনস্কি বলেন, এটি দীর্ঘ সময় পর ইউক্রেনের জন্য প্রথম গুরুতর ও বাস্তব পদক্ষেপ। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, এই সেনারা সম্মুখ সারিতে মোতায়েন হবে না, বরং নতুন কোনো বড় আগ্রাসন প্রতিরোধ করাই তাদের লক্ষ্য।
মস্কো ইউক্রেনকে আরও বেশি ভূখণ্ড ছাড়ার এবং পশ্চিমা সমর্থন ত্যাগ করার কঠোর দাবিতে অটল। কিন্তু কিয়েভ এসবকে ‘পুরাতন আলটিমেটাম’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের জটিলতা এখনো অব্যাহত, এবং পশ্চিমা সেনাদের উপস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার সতর্কবার্তা ইউক্রেন সংঘাতের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।