আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে একের পর এক ভূমিকম্পে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস ৬ দশমিক ২ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করে, যা গত কয়েক দিনের মধ্যে তৃতীয় ধাক্কা। প্রথম ভূমিকম্পেই দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান, আর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৫ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ৩ হাজার ৬৪০ জন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রায় ৮৪ হাজার মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েক হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। আফটারশক ও বৃষ্টিতে দুর্বল হয়ে পড়া মাটির কারণে তারা ঘরে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেক এলাকায় উদ্ধারকর্মীরা এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ তুলছেন। স্থানীয়রা বাঁশের খাটিয়ায় মরদেহ বহন করছেন, কেউ শাবল হাতে মাটির কবর খুঁড়ছেন।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল নাঙ্গারহার প্রদেশের সীমান্তবর্তী শিওয়া জেলা। বারকাশকোট এলাকায় সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুনার ও নাঙ্গারহারের বহু গ্রাম প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ইসলামিক রিলিফ জানিয়েছে, কুনারের কিছু গ্রামে ৯৮ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধসে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয় (OCHA) সতর্ক করেছে, দেশটিতে খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৬ হাজার ৭০০টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, তাদের খাদ্য মজুদ চার সপ্তাহের বেশি চলবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ৩০ লাখ ডলারের তহবিল ঘাটতির কথা জানিয়েছে।
তালেবান প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে সেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে অনেক স্থানে নামতে না পারায় কমান্ডো সদস্যদের প্যারাশুটের মাধ্যমে নামানো হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। তালেবানের নারী নীতি ও ত্রাণকর্মীদের ওপর বিধিনিষেধ, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বৈদেশিক সহায়তা খাতে অর্থ কাটছাঁটের কারণে আফগানিস্তান বৈশ্বিক সাহায্য থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের কর্মকর্তা জাকোপো কারিদি বলেছেন, “জরুরি সহায়তার বাইরেও আন্তর্জাতিক দাতাদের এগিয়ে আসতে হবে। নইলে আফগানিস্তান এক সংকট থেকে আরেক সংকটে ঠেলে দেওয়া হবে। এই ভূমিকম্প বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—আফগানিস্তানকে একা ফেলে রাখা যাবে না।” দুর্যোগ-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রম ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা না পেলে আসন্ন শীত মৌসুমে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।