গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশি সাবেক সরকার ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি বাজারে বিনিয়োগ, হস্তান্তর ও বিক্রির মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে উঠে এসেছে বিলাসবহুল টাউনহাউস, প্রাসাদতুল্য বাড়ি এবং শত শত অ্যাপার্টমেন্ট কেনার চিত্র, যার অনেকগুলো বর্তমানে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) ফ্রিজ আদেশের আওতায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় চুক্তি ও ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থ আত্মসাত করে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এনসিএ ইতিমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদ ফ্রিজ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ৩০০টির বেশি বৃটিশ অ্যাপার্টমেন্ট ও টাউনহাউসের মালিক হয়েছেন। তার ভাই আনিসুজ্জামান ও এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ডেভেলপারও নজরদারির তালিকায় রয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাহিদায় এনসিএ সম্প্রতি বেশ কিছু সম্পদে ফ্রিজ আদেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সম্পদ তরল করার চেষ্টা চলছে, তাই বৃটিশ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালও বলেছে, সন্দেহভাজনদের হয়ে যেসব ব্রিটিশ কোম্পানি কাজ করেছে, তাদের ‘সোর্স অব ওয়েলথ’ যাচাই না করে লেনদেন করাটা উদ্বেগজনক।
লন্ডনের ল্যান্ড রেজিস্ট্রির তথ্যমতে, গত এক বছরে অন্তত ২০টি সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা মর্টগেজ পুনঃঋণায়নের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মধ্যে সারে’র ভার্জিনিয়া ওয়াটারের একটি ৮ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের প্রাসাদও রয়েছে। নাইটসব্রিজের একটি চারতলা টাউনহাউস প্রথমে একটি আমিরাতভিত্তিক কোম্পানির মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন হয়ে পরে ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয় এক নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এনসিএর পাশাপাশি ব্রিটিশ এমপিরাও দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। এমপি জো পাওয়েল বলেন, তদন্ত চলাকালে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সন্দেহভাজনরা সম্পদ সরিয়ে ফেলতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষও আরও সম্পদ ফ্রিজের জন্য বৃটেনের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তথাপি গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্য এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—যেখানে দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।