ইতিহাসের ব্যয়বহুল রাজনৈতিক সমাবেশ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক বিশাল ও বর্ণাঢ্য মহাসমাবেশ, যা ব্যয়ের দিক থেকে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম ব্যয়বহুল কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সমাবেশকে ঘিরে দলটির পক্ষ থেকে দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে ব্যাপক প্রস্তুতি ও প্রচারণা কার্যক্রম।

সমাবেশের আয়োজনকে সফল করতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ, দাওয়াতপত্র সরবরাহ, ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে সয়লাব করা হয় সারা দেশের অলিগলি। শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও চলে বিরামহীন প্রচারণা। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয় উন্নত প্রযুক্তি, ড্রোন ফুটেজ এবং জায়ান্ট স্ক্রিন। দলটির নিজস্ব ফেসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচারসহ আশপাশের এলাকায় বড় স্ক্রিন স্থাপনেও ছিল উল্লেখযোগ্য ব্যয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটি ছিল জামায়াতের প্রথম সমাবেশ। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো—জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে, টি-শার্ট ও ব্যাজ পরে তারা অংশ নেন এ আয়োজনে। জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙে সাজানো হয় মূল মঞ্চ, যেখানে অতিথিদের জন্য রাখা হয় তিন শতাধিক চেয়ার। বৃষ্টি এড়াতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে উপযোগী করে সাজানো হয় পুরো আয়োজন।

দলটি জানিয়েছে, সমাবেশে অংশ নিতে দেশজুড়ে ১০ হাজারের বেশি বাস, বেশ কয়েকটি লঞ্চ ও কয়েক জোড়া রিজার্ভ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও বলা হয়েছে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের খরচে এসেছেন, তবে প্রত্যেকের পেছনে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে এই উদ্যানে অনেক রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও সময়, প্রচেষ্টা ও ব্যয়ের দিক থেকে জামায়াতের এই আয়োজন ছিল নজিরবিহীন। দলের পক্ষ থেকেও একে ‘ব্যয়বহুল কর্মসূচি’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশের ব্যয় নিয়ে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও দলটির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাধারণ সমর্থকদের স্বেচ্ছা অনুদান ও নিজস্ব খরচেই এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে। ব্যয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দলীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হলেও গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়নি।

সূত্রমতে, সমাবেশস্থলে অন্তত ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষের উপস্থিতি ছিল। দলটি ১০ লাখ লোকের সমাগমের পরিকল্পনা করলেও, চূড়ান্ত সংখ্যাটি নির্ধারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

সব মিলিয়ে, দলীয় ইতিহাসে এটি শুধু প্রথম সোহরাওয়ার্দী সমাবেশই নয়, বরং সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও ব্যয়ের একটি বিরল উদাহরণ হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকছে।

Related posts

শিক্ষা ক্যাডারে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও তিন দফা দাবি

BIT গঠনের দাবিতে আমরণ অনশনে চার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা

জাতির উদ্দেশে ভাষণে রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার