অমানবিক পরিবেশে আটক রাখার অভিযোগে দায়ের করা মামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক শিকাগো শহরের উপকণ্ঠ ব্রডভিউ এলাকায় অবস্থিত একটি ইমিগ্রেশন আটককেন্দ্রের অবস্থার উন্নয়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারক রবার্ট গেটলম্যান কর্তৃক জারি করা এই আদেশটি ১৪ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আটক ব্যক্তিদের জন্য পরিষ্কার বিছানা, পর্যাপ্ত ঘুমানোর জায়গা, সাবান, তোয়ালে, টয়লেট পেপার, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, নারী স্বাস্থ্য সামগ্রী এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া সেলে থাকা টয়লেটগুলো দিনে দুইবার পরিষ্কার করতে হবে এবং আটককৃতদের স্নানের সুযোগ দিতে হবে। প্রতিদিন তিন বেলা খাবার ও প্রয়োজন অনুযায়ী বোতলজাত পানি সরবরাহের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বিচারক গেটলম্যান মন্তব্য করেন, “মানুষকে টয়লেটের পাশে ঘুমাতে হবে— এটা অমানবিক। কেউ একে অপরের গায়ের ওপর ঘুমাবে— এমনটা হতে পারে না।”
ব্রডভিউ আটককেন্দ্রের অস্বাস্থ্যকর ও গাদাগাদি পরিস্থিতি নিয়ে অভিবাসন অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। কংগ্রেসের সদস্যরাও সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা কেন্দ্রটিকে “ডি-ফ্যাক্টো ডিটেনশন সেন্টার” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে মানুষকে অপ্রয়োজনে দীর্ঘ সময় ধরে রাখা হয়।
যদিও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন দাবি করেছেন, “ICE ব্রডভিউ সুবিধা কেন্দ্রের অবস্থার বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের তিনবেলা খাবার, পানি, ফোনের সুবিধা ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।”
বিচারক গেটলম্যান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, আটক ব্যক্তিদের যেন বিনামূল্যে ও ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় এবং ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রো বোনো (বিনামূল্যে) আইনজীবীদের তালিকা সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি কোনো নথি জালভাবে উপস্থাপন বা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যালেক্সা ভ্যান ব্রান্ট বলেন, “এই আদেশ আটক ব্যক্তিদের অজান্তে স্বাক্ষর করিয়ে তাদের অধিকার হরণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তারা এখন আটককেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ নীতি, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ সংক্রান্ত নথি আদালতে চেয়েছেন। আরেকটি মামলায়, আদালতে শুনানিতে দেখা যায় যে সীমান্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা প্রতিবাদকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও পেপার বল ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে আরেক বিচারক সারা এলিস ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন যাতে কর্মকর্তারা ব্যাজ পরেন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সহিংসতা না করেন।
মানবাধিকার আইনজীবী ক্রেগ ফাটারম্যান বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে শিকাগো এলাকায় অযথা বলপ্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনা বেড়েছে।” বিচারক গেটলম্যান শুক্রবারের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে তাদের নির্দেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, “আমি জানি, এই পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে মানবিকতা রক্ষায় এটি জরুরি।”