যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি: সর্বোচ্চ সিরিয়ায়, সবচেয়ে কম ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে

বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক নতুন সংকেত হয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কনীতি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন যে ১ আগস্ট  থেকেই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে এবং এতে বিশ্ব অর্থনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও একে অপরিবর্তনীয় সময়সীমা বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাম্প যখন ৬৮টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের আদেশে সই করেন, তখন শুল্ক কার্যকরের শুরুর তারিখ সাত দিন পিছিয়ে ৭ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়—যাতে শুল্কতালিকা হালনাগাদ করা যায়। শুল্কহার সর্বোচ্চ সিরিয়ায় ৪১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১০-১৫ শতাংশ ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর নির্ধারিত হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ওপর ২৫%, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯%, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে যথাক্রমে ১৫% ও ২৫% শুল্কের আওতায় আনা হয়েছে। তাইওয়ানকে ৩২% এবং ব্রাজিলকে ৫০% শুল্কের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, ভারত, চীন, কানাডা, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে চুক্তির জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও অনেক দেশ এখনও চুক্তিতে পৌঁছায়নি। কানাডাকে ট্রাম্প ৩৫% শুল্কের হুমকি দিয়েছেন, তবে আলোচনা স্থগিত। চীনকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, তবে ট্রেজারি সেক্রেটারি জানিয়েছেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্টই নেবেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শুল্কারোপের ফলে বিশ্বব্যাপী কাঁচামাল ও রপ্তানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। এতে উৎপাদন খরচ ও মূল্যস্ফীতি বাড়বে, যা সরাসরি ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে। একাধিক দেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। যেমন ব্রাজিল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি পণ্যে নতুন শুল্ক আরোপ করবে তারা।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্তজ বলেন, “এই সিদ্ধান্ত জার্মানির অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমি এতে মোটেও সন্তুষ্ট নই।” এক জাপানি নাগরিক বলেন, “১৫% শুল্ক খুব বেশি। মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আমরা এখন হতাশ।”

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক মহল। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (ICC) সতর্ক করে বলেছে, এই শুল্কনীতি বিশ্বকে আরেকটি মহামন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা, পাল্টা শুল্কারোপ এবং একটি বৃহৎ বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্ব এখন অপেক্ষায়—এই সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রভাব কেমন হয় এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কৌশলে দেশগুলো কীভাবে জবাব দেয়।

 

Related posts

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাফেলোতে ফ্রি ভ্যাকসিন ক্লিনিক

প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে ১১৯টি JCPenney স্টোর বিক্রি

নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর হামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৫