ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শহরের অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শওয়াল্ব। তার অভিযোগ, রাজধানীতে সেনা নামানো মূলত এক ধরনের ‘অবৈধ সামরিক দখল’ এবং অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে এটি মার্কিন সংবিধান ও ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করছে।
শওয়াল্ব ফেডারেল আদালতে দাখিল করা মামলায় উল্লেখ করেন, প্রায় ২ হাজার ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছে এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল সার্ভিসের মাধ্যমে আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় আইন প্রয়োগে সামরিক হস্তক্ষেপের মৌলিক নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ হয়েছে। তার দাবি, এ পদক্ষেপ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং হোম রুল অ্যাক্টে নিশ্চিত ডিসির স্বায়ত্তশাসন ক্ষুণ্ন করেছে।
৫২ পৃষ্ঠার আবেদনে তিনি লিখেছেন, সেনা মোতায়েন রাজধানীর নাগরিক ও পুলিশের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক নষ্ট করছে এবং অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরি করছে। তার ভাষায়, “ওয়াশিংটনে সেনা টহল গণতন্ত্রের মূল নীতিকে উপেক্ষা করছে—যেখানে অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগে সামরিক বাহিনীর কোনো ভূমিকা নেই।”
অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিযোগ, সাতটি অঙ্গরাজ্য ও কলম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট থেকে আনা দুই হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য সশস্ত্র হয়ে টহল দিচ্ছেন, যাদের সাঁজোয়া গাড়িও ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিচার বিভাগ তাদের অতিরিক্ত আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দিয়েছে—যার মধ্যে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার অন্তর্ভুক্ত। অথচ ডিসির স্থানীয় প্রশাসন বা বাসিন্দারা এ সহায়তা চাননি।
আইন অনুযায়ী, ফেডারেল পর্যায়ে এ ধরনের সেনা মোতায়েন সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য কার্যকর থাকে। বর্তমানে ‘অপরাধ জরুরি অবস্থা’র আওতায় কার্যকর এই মোতায়েনের মেয়াদ ১০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে, যদি না কংগ্রেস বাড়ায়। উল্লেখ্য, এর আগে একই ইস্যুতে শওয়াল্ব ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেনা মোতায়েনের ফলে রাজধানীতে গ্রেফতার বেড়েছে। এমনকি তুলনামূলক ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রেও গুরুতর ফেডারেল অভিযোগ আনা হচ্ছে। এক ঘটনায় একজন ব্যক্তি সেনা মোতায়েনের প্রতিবাদে একজন কর্মকর্তার দিকে স্যান্ডউইচ ছুড়ে মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে গ্র্যান্ড জুরি এতে ফৌজদারি অভিযোগ আনতে অস্বীকৃতি জানায়।
সমালোচকরা দাবি করছেন, মোতায়েনের আসল উদ্দেশ্য অপরাধ দমন নয়; বরং সেনাদের অনেককে পাতা পরিষ্কার, আবর্জনা সরানো কিংবা গৃহহীনদের ক্যাম্প উচ্ছেদের মতো কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। তীব্র সমালোচনার মাঝেও ট্রাম্প ওয়াশিংটনে এই সেনা মোতায়েনকে ‘সফল মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, শিকাগো ও বাল্টিমোরসহ আরও কিছু শহরে একই ধরনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।