ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে তুলসি গ্যাবার্ডের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্র’ অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এক বিস্ফোরক অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার প্রশাসনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্র’ পরিচালনার দাবি তুলেছেন। গ্যাবার্ডের মতে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া গোয়েন্দা তথ্য তৈরি করে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল তৎকালীন বিজয়ী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈধতাকে খাটো করা।

গার্ডিয়ান অনলাইনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্যাবার্ডের অভিযোগ, এই ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল বিতর্কিত ‘স্টিল ডসিয়ের’—বৃটিশ গোয়েন্দা বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার স্টিলের তৈরি এক গোপন নথি, যার তথ্য সন্দেহজনক হলেও তৎকালীন ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা তা আমলে নেন এবং গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

গ্যাবার্ড দাবি করেন, “আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি যা স্পষ্ট করে দেয়—২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একটি সুপরিকল্পিত রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন। তারা ট্রাম্পের বৈধ নির্বাচনী জয়কে নস্যাৎ করে, আমেরিকার জনগণের মতকে অগ্রাহ্য করতে চেয়েছেন।” তিনি বলেন, বারাক ওবামা, সাবেক জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার, সিআইএ প্রধান জন ব্রেনান, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস ও এফবিআই ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু ম্যাককেবের নাম তদন্তের আওতায় আনা উচিত।

গ্যাবার্ডের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা টিমের এক বৈঠকের পর গোয়েন্দা তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে মিডিয়ায় ফাঁস করা হয়। এসব তথ্য ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যেখানে দাবি করা হয়—রাশিয়া সাইবার উপায়ে মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পকে জয়ী করতে হস্তক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গ্যাবার্ড দাবি করেন, এই মূল্যায়নের ভিত্তি ছিল সন্দেহজনক স্টিল ডসিয়ের।

প্রসঙ্গত, গ্যাবার্ডের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা জেফরি এপস্টেইনের কেলেঙ্কারি নিয়ে ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলেছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এপস্টেইন সম্পর্কিত তথাকথিত ‘গ্রাহক তালিকা’ আসলে ওবামা প্রশাসনের তৈরি ভুয়া নথি।

তবে তুলসি গ্যাবার্ডের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। তার রাশিয়াপন্থী অবস্থান ও ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে পুতিন-সমর্থনমূলক বক্তব্য তাকে সমালোচনার মুখে ফেলে। পাশাপাশি গোয়েন্দা অভিজ্ঞতার অভাব থাকা সত্ত্বেও জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তার নিয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

গ্যাবার্ডের দাবিগুলোর সত্যতা যাচাই এখনও হয়নি। তবে তার এই পদক্ষেপ মার্কিন রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের দিকে আইনি দৃষ্টি ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

Related posts

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাফেলোতে ফ্রি ভ্যাকসিন ক্লিনিক

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি: সর্বোচ্চ সিরিয়ায়, সবচেয়ে কম ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে

প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে ১১৯টি JCPenney স্টোর বিক্রি