Thursday, November 7, 2024
Homeদেশের খবরকোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক হাসপাতাল থেকে ডিবি হেফাজতে

কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক হাসপাতাল থেকে ডিবি হেফাজতে

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এঁরা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

একদল ব্যক্তি সাদাপোশাকে শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যান। সে সময় ওই ব্যক্তিরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেন। সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এ তথ্য জানান।

রাতে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার করে ডিবি।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম রাত সাড়ে ১১টার দিকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। সহিংসতার বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে।

এই তিনজনকে এর আগেও একবার তুলে নেওয়া হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পর ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়। ২১ জুলাই ভোরে পূর্বাচল এলাকায় তাঁকে ফেলে যাওয়া হয়। নাহিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এর পর থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ ও বাকেরকেও ১৯ জুলাই তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই আসিফকে হাতিরঝিল ও বাকেরকে ধানমন্ডি এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। এর পর থেকে আসিফও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে থাকছিলেন বাকের।

শুক্রবার তিনজনকে তুলে নেওয়ার খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে যান। নাহিদ হাসপাতালের ৭০৩ নম্বর কক্ষে এবং আসিফ ৩১১ নম্বর কক্ষে ভর্তি ছিলেন। নাহিদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আর আসিফের সঙ্গে বাকের ছিলেন।

হাসপাতালে উপস্থিত নাহিদের স্বজনেরা জানান, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে প্রথমে নাহিদকে তুলে নিয়ে যান। পরে আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান।

নাহিদকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সঙ্গে থাকা তাঁদের স্বজন ফাতিমা তাসনীম বলেন, বিকেলে তিনি নাহিদের কক্ষেই ছিলেন। হাসপাতালের যে ছেলেটি খাবার দিত, তাকে আটক করা হয়েছে, এমন খবর শুনে তিনি নাহিদের কক্ষ থেকে আসিফের কক্ষে যান। তখন চারজন ব্যক্তি আসিফ ও বাকেরকে ধমকাচ্ছিলেন।

ফাতিমা তাসনীম বলেন, ‘ওই ব্যক্তিরা আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করলে আমি ও হাসপাতালের নার্সরা তাঁদের বলি, রোগীদের ডিসচার্জ (ছাড়পত্র) দেওয়া হয়নি। তখন ওই ব্যক্তিরা নার্সদের ইনচার্জকে বলেন, “আমাদের চেনেন? কাউন্টার টেররিজম সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে?” এরপর কোনো কথা না শুনে তাঁরা আসিফ ও বাকেরকে নিয়ে যান। দুজনের মুঠোফোনও নিয়ে যান। এরপর জানতে পারি, নাহিদকেও তুলে নেওয়া হয়েছে।’

আসিফ মাহমুদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সকাল সাতটার দিকে হাসপাতালে এসে তিনি আসিফ মাহমুদের কক্ষের সামনে অপরিচিত তিন ব্যক্তিকে দেখতে পান। পরে আরও সাত-আট ব্যক্তি আসেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ডিবি ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য পরিচয় দিয়ে কয়েকজন এসে আসিফকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলেন। এ সময় চিকিৎসককে সরে যেতে বলেন।

ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি তাঁদের বলি, ডিসচার্জ না করে কোনো রোগীকে আমরা ছাড়তে পারি না। আসিফের শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে তিনি ডিসচার্জের উপযোগী ছিলেন না। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও কিছু একটা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল থেকে যেতে চাননি। আমরাও ছাড়তে চাইনি। কিন্তু তাঁদের চাপাচাপির কারণে বাধ্য হয়ে তাঁকে ডিসচার্জ অন রিস্ক বন্ড করতে হয়।’

ওই ব্যক্তিদের চাপের মুখে আসিফের মতো নাহিদ ইসলামকেও তাঁর নিজ দায়িত্বে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে নেওয়াসহ সরকারকে চার দফা দাবিতে দুই দিন আগে দুই দফায় ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার আলটিমেটাম শেষ হয়েছে। এদিন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments