Saturday, November 23, 2024
Homeআমেরিকাকামালা-ট্রাম্প বিতর্ক: উঠে এল যেসব বিষয়

কামালা-ট্রাম্প বিতর্ক: উঠে এল যেসব বিষয়

আসছে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হচ্ছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কামালা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন কামালা, আর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে তাঁরা প্রথমবারের মতো সরাসরি বিতর্কে অংশ নিলেন। এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়)। বিতর্কের আয়োজক ছিল মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ এবং সঞ্চালক ছিলেন ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস।

দেড় ঘণ্টার বিতর্কের শুরুতেই অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভপাতের অধিকার, অভিবাসন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ও আফগানিস্তান পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়।

কামালা-ট্রাম্পের বিতর্কে উঠে আসা বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাকঃ

অর্থনীতি ও বেকারত্ব

কামালা হ্যারিস বিতর্কের শুরুতেই অর্থনীতির প্রসঙ্গে ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্প যখন ক্ষমতা ছাড়েন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চরম দুরবস্থায় ছিল। বেকারত্বের হার ছিল মহামন্দার পর সবচেয়ে বেশি। কমলা আরও উল্লেখ করেন, ১৬ জন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে আগামী বছরে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা শুরু হতে পারে।

ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই দাবি করে কামালা বলেন, “ট্রাম্প জনগণের কথা না ভেবে কেবল নিজেকে রক্ষা করতে বেশি আগ্রহী। তিনি করপোরেশন এবং ধনকুবেরদের জন্য করছাড় দিয়েছেন, যা সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতিকর।”

কামালার সমালোচনার জবাবে ট্রাম্প বলেন, “কামালা খালি কলসি, তাঁর কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নেই। তিনি বাইডেনের পরিকল্পনা অনুকরণ করছেন।” তিনি আরও জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালী রাখতে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে অর্থনীতি সচল রাখতে চান।”

গর্ভপাতের অধিকার

গর্ভপাতের অধিকার প্রসঙ্গে ট্রাম্পের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি ডেমোক্রেটদের ৯ মাসের গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অধিকার দেওয়ার প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি চান, গর্ভপাতের অধিকার সংক্রান্ত আইন অঙ্গরাজ্যগুলোই নির্ধারণ করুক এবং নারীদের অধিকারের বিষয়টি অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবেন। এর উত্তরে কামালা বলেন, ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাই ফেডারেল গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করেছেন, যা অনেক নারীর জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। “অনেক নারী পার্কিং লটে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছেন,” উল্লেখ করে তিনি ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেন।

গাজা যুদ্ধ

গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, কামালা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন এবং কামালা প্রেসিডেন্ট হলে ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকবে না। যুদ্ধ থামানোর কৌশল হিসেবে তিনি দাবি করেন, তাঁর প্রশাসন থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না। কামালা ট্রাম্পের অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ট্রাম্পকে বিভাজন সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, “যুদ্ধ অবশ্যই থামাতে হবে এবং গাজায় দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

ইউক্রেন যুদ্ধ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে কামালা বলেন, “ন্যাটো মিত্ররা কৃতজ্ঞ যে আপনি (ট্রাম্প) আর প্রেসিডেন্ট নেই, কারণ পুতিন সহজেই আপনাকে কবজা করতে পারতেন।” ট্রাম্প এর জবাবে বলেন, তিনি চান যুদ্ধ বন্ধ হোক এবং ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমানো হোক।

কথার লড়াই

বিতর্কের এক পর্যায়ে ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে “অস্তিত্বহীন প্রেসিডেন্ট” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। কামালা পাল্টা জবাব দেন, “আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, আপনি লড়ছেন আমার বিরুদ্ধে।”

ট্রাম্প আরও বলেন, “বাইডেন ও কামালা মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।” কামালা পাল্টা জবাব দেন, “বিশ্বনেতারা ট্রাম্পকে নিয়ে হাসাহাসি করেন।”

ক্যাপিটলে হামলা

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার প্রসঙ্গে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বক্তব্য দিয়েছেন এবং তাঁর কোনো উসকানি ছিল না। তবে কামালা তাঁকে অভিযুক্ত করে বলেন, “ট্রাম্প সেদিন ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা উসকে দিয়েছিলেন এবং এজন্যই তিনি অভিযুক্ত ও অভিশংসিত হয়েছেন।”

বিতর্কের প্রতিক্রিয়া

বিতর্ক শেষে কামালার নির্বাচনী প্রচার শিবিরের মুখপাত্র জেন ও’ম্যালি ডিলন বলেন, “ট্রাম্প বিতর্কে পুরোপুরি অসংলগ্ন ছিলেন, রাগান্বিত ও বিশৃঙ্খল ছিলেন।” অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রচার শিবির দাবি করে, “রিপাবলিকান প্রার্থী বিতর্কে নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন।”

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে লড়বেন কামালা হ্যারিস। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে দুজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments